অন্যযুগ/


শিয়ালী এ নাহিবি ৰাতি... : লোক সাহিত্যৰ অন্যতম অৱদান নিচুকণি গীত

 মঞ্জু দাস

 

       সকলো শিশুৱে কান্দে৷ কিন্তু কোনো মাতৃ প্ৰাণে কেতিয়াও সেই শিশুৰ কান্দোন সহ্য কৰিব নোৱাৰে৷ মুক শিশুৰ অবুজ কান্দোন আঁতৰাই শান্ত কৰিবলৈ, টোপনি নিয়াবলৈ শিশুক কোলাত লৈ মাতৃ, আইতাক অথবা ধাইমাতৃয়ে নচুৱাই নচুৱাই গীত-পদ গায়৷ এনেবোৰ গীতকে নিচুকণি গীত বুলি কোৱা হয়৷

       জীৱনত কোনো বোজা নথকা, যুক্তি আৰু ব্যাকৰণৰ পৰা মুক্ত, উৰি ফুৰা কল্পনাৰ জগতত বিস্ময় আৰু কৌতূহলেৰে বিচৰণ কৰা, অসংলগ্ন সৰ্বকালৰ, সৰ্বদেশৰ শিশুৰ জগতখন সদায়ে একে৷ শিশুৰ মনৰ ভয়, বিস্ময় বুজি পোৱা শিশুৰ লগত সততে জড়িত হৈ থকা মাক, আইতাক আৰু ধাইমাকসকলে সকলো দেশতে শিশুক আলফুলকৈ কোলাত লৈ চোতাল অথবা ঘৰতে ঘূৰি ঘূৰি এক শ্ৰেণীৰ সুৰীয়া গীত গায়৷ এইবোৰেই নিচুকণি গীত অথবা ধাইনাম নামে পৰিচিত৷

       ৰচনাৰ ফালৰ পৰা এই নিচুকণি গীতবোৰ কোনো যুগত বা কালত সীমাৱদ্ধ কৰি ৰাখিব নোৱাৰি৷ এইবোৰ গীত যুগ নিৰপেক্ষ৷ ভাৰতৰ বিভিন্ন প্ৰান্তত প্ৰচলিত ভাষাসমূহৰ নিচুকণি গীতৰ নামাকৰণত ভিন্নতা দেখা যায়৷ বাংলা ভাষাত কোৱা হয় ‘ঘুমপাৰনি গান’, হিন্দী আৰু পাঞ্জাৱীত কোৱা হয় ‘ল’ৰী’, তামিলত ‘থালাও’, গুজৰাটীত ‘হাল্লাৰডু’ আৰু অসমীয়া ভাষাত ‘নিচুকণি গীত’ বা ‘ধাই নাম’ নামেৰে জনাজাত৷ নামাকৰণত ভিন্নতা থাকিলেও বিশ্বৰ সকলো দেশৰে নিচুকণি গীতৰ মূল সুৰ এটাই৷ পাৰ্থক্য মাত্ৰ দেশ আৰু যুগৰ প্ৰলেপৰ৷ গীতবোৰৰ মাজেৰে গ্ৰাম্য জীৱনৰ ছবি, গ্ৰাম্য বিশ্বাসৰ লগতে গ্ৰাম্য মনৰ ৰসাল সৃষ্টি ধৰ্মিতাৰ উমান পোৱা যায়৷ গীতবোৰৰ মাজত এনে এক আৱেদন আছে, যিয়ে প্ৰায়বোৰ শিশুকে সন্তুষ্ট কৰি আনন্দ দান কৰিব পাৰে৷

       অদ্ভুত, বীভৎস ৰসাদি মিশ্ৰিত এই গীতবোৰত চিনাকী-অচিনাকী উপমা-ৰূপক ব্যৱহাৰ কৰি শিশুৰ মনত ৰসৰ সঞ্চাৰ কৰিবলৈ চেষ্টা কৰা দেখা যায়৷ কেতিয়াবা অসুৰ-দৈত্য, জীৱ-জন্তু, চৰাই-চিৰিকতি আদিক সামৰি শিশুসকলক এখন মায়াময় জগতলৈ লৈ যোৱা হয়৷ শিশুসকলেও এইবোৰকে সঁচা বুলি পতিয়ন যায় আৰু কান্দিবলৈ এৰে৷ কিয়নো ভয় খালে শিশুৱে কান্দিবলৈ এৰে৷ উদাহৰণস্বৰূপে -

              শিয়ালী এ নাহিবি ৰাতি

              তোৰে কাণ কাটি লগামে বাতি৷

              শিয়ালীৰ মূৰতে মৰুৱা ফুল

              শিয়ালী পালেগৈ ৰতনপুৰ৷

       এনেবোৰ গীতৰ জৰিয়তে শিশুসকলক পৰোক্ষভাৱে ভীতি প্ৰদৰ্শন কৰাৰ প্ৰয়াস লক্ষণীয়৷ শিশুৰ কাণ খাবলৈ শিয়ালী লৱৰি আহে, শিয়ালীৰ কাণ কাটি বাতি (চাকি) জ্বলোৱা হয়, শিয়ালীৰ মূৰত মৰুৱা ফুল ফুলে ইত্যাদি৷

       শিশুক শোওৱা, শিশুক নিচুকোৱা আৰু শিশুক ওমলোৱা তিনি প্ৰকাৰৰ নিচুকণি গীতৰ উল্লেখ পোৱা যায় যদিও বিষয়বস্তুৰ ফালৰ পৰা এই গীতবোৰক সৰল আৰু উদ্দেশ্যধৰ্মী এই দুটি ভাগত বিভক্ত কৰিব পৰা যায়৷ যিবোৰ গীত কেৱল আনন্দৰ বাবে সেইবোৰ সৰল। যেনে- 

              ১)     আমাৰ মইনা ভাল, টিক্‌টিক্‌ কৰে লাল৷

                     ৰাতি পুৱাই উঠি খায় পকা বেল৷৷

              ২)    ৰ’দালি এ ৰ’দ দে

                     আলি কাটি জালি দিম

                     বৰ পীৰা পাৰি দিম

                     তাতে বহি ৰ’দ দে৷৷

              ৩)   ৰ’দো দিছে বৰষুণো দিছে

                     খঁৰা শিয়ালৰ বিয়া

                     ঘনচিৰিকাই তামোল কাটিছে

                     আমাকো এখন দিয়া৷৷

              ৪)    আমাৰে বুলবুল অকণমানি

                     ভাতকেইটা খাই বৈ যাব টোপনি

                     বুলবুলে কিতাপ পঢ়ে লাপ্‌পা কুৰ্‌কুৰ৷

                     সেইখন বহীত নিলিখিবা সৌটো কলম মোৰ৷৷ ইত্যাদি।

       আনহাতে এনে কিছুমান গীত আছে যিবোৰৰ আঁৰত কম-বেছি পৰিমাণে ৰচকৰ উদ্দেশ্য নিহিত হৈ থাকে৷ এনে গীতত ৰচকসকলে বাস কৰা সমাজখনৰ গতি-বিধি, আচাৰ-বিচাৰ, ৰীতি-নীতিৰ উমান পোৱা যায়৷ প্ৰকৃতি জগতৰ লগত চহা জীৱনৰ সম্বন্ধ অতি গভীৰ৷ সেয়েহে চহা ৰচকৰ গীতৰ ভিত্তি প্ৰকৃতি৷ নিচুকনি গীততো প্ৰকৃতি বিৰাজমান৷

              ১)     আমাৰে মইনা শুব এ

                     বাৰীতে বগৰী ৰুব এ

                     বাৰীৰে বগৰী পকি সৰিব

                     মইনাই বুটলি খাব৷

              ২)    এক তৰা, দুই তৰা

                     সৰগত বহি কি কৰাঁ

                     আম, জাম, লেতুকৰ কোঁহ

                     হৰিৰ মাকৰ আঙুল্‌টো চোহ৷

              ৩)   জোনবাই এ

                     এটি তৰা দিয়াঁ

                     এটি তৰা নালাগে

                     দুটি তৰা দিয়াঁ

                     পাত নাই চোত নাই

                     কিহতকৈ দিম

                     হালধীয়া চৰায়ে বাও ধান খায়

                     সাউদৰ পুতেকে নাও মেলি যায়

                     নাৱে বোলে টুলুং ভুতুং

                     ঠাই বোলে বাওঁ

                     গধূলিতে গধূলিতে ডবা কোবাওঁ৷

              ৪)    ঘন  চিৰিকা ঘন চিৰিকা

                     আহাঁ জঁপিয়াই

                     খুটি খুটি চাউল খোৱাঁ

                     দিছোঁ ছটিয়াই

                     ইমান সৰু চকুযুৰি

                     ইমান সৰু ভৰি

                     জাঁপ মাৰোঁতে তুমি বাৰু

                     নোযোৱানে পৰি?

              ৫)   বেঙৰ আছিল সাত ভাই

                     চলায় ঠেলা গাড়ী

                     সবে গৈছিল বিয়া খাবলৈ

                     বন্ধু ফৰিঙৰ বাৰী৷

                     থপ্‌থপাই বুঢ়া বেঙৰ তৎ নাই গাত

                     পিন্ধিছে বুট জোতা ৰঙা কোট গাত৷

              ৬)    ককা হাতী

                     মইযে তোমাৰ নাতি

                     তোমাৰ তলত লুকাই থাকোঁ

                     মোক নালাগে ছাতি

                     মস্ত এটা পেট, মস্ত এডাল নেজ

                     চকু দুটা তেনেই সৰু

                     লাজ নালাগে ধেৎ৷

              ৭)   ককাৰ আছিল এখন পাম

                     হয়নে হয়নে হয়

                     বিতোপন পামৰ নাম

                     হয়নে হয়নে হয়

                     পামত আছিল শিয়ালী

                     হোৱা কৰে গধূলি

                     কে কে হোৱা কে কে হোৱা

                     শুনি লাগে ভয়৷

       কেতিয়াবা কেতিয়াবা খেল ধেমালিৰ গীত গায়ো শিশুক নিচুকোৱা হয়৷ গীতবোৰত অসঙ্গত আৰু অসামঞ্জস কথা কিছুমানো সংলগ্ন কৰি দিয়া হয়৷ এই গীতবোৰৰ উদ্দেশ্য মাত্ৰ অশান্ত শিশুক শান্ত কৰা৷ যেনে-

              ১)    ইঘৰৰ মেকুৰী সিঘৰে যায়

                     বামুণৰ মেকুৰী ভজা মাছ খায় : বুলি ভাকুট কুট দিয়ে৷

              ২)   এইডাল কি গছ?

                     লেতুকৰ গছ৷

                     লাগিছে নে নাই?

                     : লাগিছে৷

                     পকিছে নে নাই?

                     : পকিছে৷

                     গোঁসাই বামুণক দিছা নে নাই?

                     : দিছোঁ৷

                     আমাক দিবানে?

                     : নিদিওঁ৷

                     গছডাল কাটোঁ

                     : নাকাটিবা৷

                     বৰকুঠাৰখন আনো?

                     : নানিবা৷

                     ঘেচ্‌ ঘেচ্‌ ঘেচ্‌। (বুলি কৈ হাতকেইখন আঁতৰাই দিয়ে)।

              ৩)   চিলনী চিলনী তোৰ হাতখন কিহে নিলে?

                     : চিলাই নিলে৷

                     চিলাই নি ক’ত থলে?

                     : হাবিত থলে

                     সেই হাবি কি হ’ল?

                     : পুৰি গ’ল

                     ছাইখিনি কোনে নিলে?

                     : ধোবাই নিলে... 

              ৪)    ফেচুৰ দালা

                     ঠেং চু চু

                     লালে ক’ক গৈছে? (লালে- গিৰীয়েক)

                     খেৰ কাটিব

                     খেৰৰ মাজত বাঘে খালা

                     ইটো কথা কোনে কলা

                     ৰাজাথেৰ পেটলাই কলা

                     আন মাতি

                     আনিছো মাতি

                     মাৰ চৰ্‌

                     মাৰিছো চৰ্‌

                     বগৰী গছত চূণৰ ফোটা

                     কাউৰে কৰে জোটাপোটা

                     বগৰী গুৰা খাবি নে

                     খাম খাম খাম। (বুলি ভৰি দুখনত বহুৱাই লোৱা শিশুটিক দাঙি দিয়ে)।

       এনেদৰে সহজ ভাব, সৰল ভাষা আৰু চিনাকী উপমাৰে এই গীতবোৰ ৰচনা কৰা হৈছে৷ লোকগীতৰ অন্তৰ্গত এই নিচুকণি গীতসমূহে লোকসাহিত্যত বিশেষ স্থান লাভ কৰি আহিছে৷ যুগৰ প্ৰভাৱে এই গীতসমূহলৈ কিছু নতুনত্ব আনিছে৷ অঞ্চলভেদে অসমীয়া নিচুকণি গীতবোৰ বেলেগ বেলেগ হয়, ভাষা আৰু সুৰৰ প্ৰভেদ দেখা যায় যদিও শব্দ আৰু অৰ্থৰ ফালৰ পৰা গীতবোৰ শিশুৰ চিন্তাশক্তিৰ জোখেৰেই কোমল৷ শিশুৰ কোমল অনুভূতিক স্পৰ্শ কৰিব পৰাকৈ কোমল৷ বিশ্বৰ সকলো দেশৰ নিচুকনি গীতৰ মূল সুৰ কিন্তু একেটাই৷


     গ্ৰন্থপঞ্জী :

      ১৷   ভট্টাচাৰ্য, বসন্ত কুমাৰ। অসমীয়া লোকগীত সমীক্ষা, চন্দ্ৰ প্ৰকাশ, গুৱাহাটী, ২০০৭

   ২৷ দাস, ধীৰেন। গোৱালপৰীয়া লোক সংস্কৃতি আৰু লোকগীত, চন্দ্ৰ প্ৰকাশ, গুৱাহাটী, ১৯৯৪

     ৩৷  শৰ্মা, সত্যেন্দ্ৰ নাথ । অসমীয়া সাহিত্যৰ সমীক্ষাত্মক ইতিবৃত্ত, গুৱাহাটী, ১৯৮৯৷

     ৪৷  শৰ্মা, হেমন্ত কুমাৰ : অসমীয়া লোকগীতি সঞ্চায়ন, গুৱাহাটী, ১৯৯০৷

টোকা  : কেইটিমান গীত স্থানীয় ব্যক্তিৰ পৰা সংগ্ৰহ কৰা হৈছে৷

 

ভ্ৰাম্যভাষ - ৭০৮৬৭৪৮৮১৯

 

অন্যযুগৰ প্ৰকাশিত সংখ্যাসমূহ